গনতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি এ দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গনতন্ত্রের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে একটি গুরত্বপূর্ণ এবং অন্যান্য মাইলফলক।
বাংলাদেশের জনগন দেশের স্বার্থে সবসময়ই অত্যন্ত সক্রিয়।চলমান উন্নয়ন পক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রয়োজন জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহন,সহযোগিতা এবং যথাযথ সমন্বিত উদ্যেগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যেগের কারনে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলসমূহ অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে এবং জাতীয় আয় ও বাজেটে বরাদ্দ উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরন ঘটেছে নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে। এ ছাড়াও কৃষি,শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্নখাতে ব্যাপক উন্নতি অর্জিত হয়েছে। অয়ান্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বীকৃতি অর্জন করায় সারা বিশ্বের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাফল্য আজ প্রমানিত। এই সাফল্য ও স্বীকৃতির সমন্বয়ে বর্তমান সরকার রুপকল্প (ভিশন) ২০২১ অর্জনে বদ্ধপরিকর।
গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ও অগ্রগতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলঃ
অর্থ, বানিজ্য ও পরিকল্পনাঃ
গত তিন বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হারছিল ৬.৫ শতাংশ। এছাড়া মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, রিজার্ভ প্রায় ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রেমিট্যান্স ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়ন করা এবং Financial Reporting Act অনুমোদনের পর ২০১৬ সালে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রনয়ন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি একটি সাহসী ও দুরদর্শী পরিকল্পনা।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচির ব্যয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়নে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ১৬৭৯.৮১ কোটি মার্কিন ডলার। যা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি আয়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। পুরো ২০১৬ সালে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যবসায় প্রতিযোগিতামুলক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোর রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ‘পাওয়ার হাউজ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।
শিক্ষাঃ
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উপবৃত্তি ও বেতন মওকুফ সহায়তা হিসেবে ৪৯ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৮৫ শিক্ষার্থীকে ৮৮০.২৭ কোটি টাকা বিতরন করা হয়। জাতিসংঘের বেধে দেয়া সময়সীমার তিন বছর আগেই ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাগত সমতা অর্জন করে। এটি সম্ভব হয়েছে মহাজোট সরকারের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের অংশ হিসেবে ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩.১১ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। ঢাকায় একটি অটিস্টিক একাডেমী স্থাপনের জন্য পৃথকভাবে দুটি হোস্টেল নির্মান করা হবে যেখানে প্রতিটিতে ১০০ জন অটিস্টিক শিশুর আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। অটিজম বিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপার্সন্ম সায়মা ওয়াজেদ এর আন্তরিক ও কঠোর পরিশ্রমে দেশের ওটিস্টিক ছেলে-মেয়েদের কল্যানে কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
২০১৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নীট ভর্তির হার ৯৭.৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়ে ২০.০৯ শতাংশে দাড়িয়েছে। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের দপ্তরসমূহে ইন্টারনেট সংযোগসহ ৫৫টি পিটিআইতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ৫ হাজার ৪৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া,ইন্টারনেট মডেম ও সাউন্ড সিস্টেম সরবারহ করা হয়েছে। আইসিটি ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে মোট ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবসহ সারা দেশের দুই হাজার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনঃ
বিভিন্ন সূচকে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিফলিত হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু ৭১.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার কমে প্রতি হাজারে ২৯ জনে দাড়িয়েছে। মাতৃমৃত্যু হারও কমে প্রতি লক্ষে ১৭০ জনে নেমে এসেছে। ৬৪টি জেলা হাসপাতাল ও ৪২১টি উপজেলা হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে ১৬২৬৩ নম্বরে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকার উচ্ছেদে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশকে পুরস্কার দিয়েছে। একই বছরে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স। একসঙ্গে কোনো একটি বিভাগ থেকে এত নিয়োগ দেশে এটাই প্রথম। শুধু বাংলাদেশ নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই রেকর্ড নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত প্রস্তাবনা পাস হয়েছে।
আগে ৮৫টি দেশে ওষুধ রফতানি হতো। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ১২৫টি দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে। ওষুধ বিদেশে রফতানি হওয়ার কারণে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ আরো জরুরি হয়ে পড়েছে। আর তাই চলতি বছর জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
দেশের কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় অর্ধ লক্ষাধিক রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছে। ক্রমান্বয়ে দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সুবিধা চালু হবে।
কৃষি, খাদ্য ও শিল্পঃ
২০১৫-১৬ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে ৩৯১.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন।উৎপাদনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৯০০০ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে ২৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ৩০ শতাংশ ভর্তূকিতে যন্ত্রাংশ সরবারহের জন্য ১৭২.১৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নসহ হাওড় অঞ্চলে কৃষিযন্ত্র সরবারহের জন্য ১০.৬০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। গত তিন বছরে খরা,বন্যা, লবনাক্ততা সহনশীলসহ রোগ প্রতিরোধক্ষম এবং উচ্চ ফলনশীল ৭০টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। কৃষকদের জৈবসার ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহিত করার ফলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
২০১৬ সালে দানাশস্যের উৎপাদন ৩৫.৬৮ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে অভ্যন্তরীন উৎস হতে ১২ লক্ষ টন চাল এবং ২ লক্ষ ৪ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে মোট খাদ্যশস্য মজুদ ছিল ১৫ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ই শ্রীলংকায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এই প্রথম অন্য দেশে চাল রপ্তানি করেছে। সরকারি খাদ্য বিতরন কর্মসুচির আওতায় ১১ লক্ষ ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৪ লক্ষ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন গম বিতরন করা হয়েছে। সরকারি খাদ্য গুদামের ধারনক্ষমতা ২০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও পারিবারিক পর্যায়ে দুর্যোগপ্রবণ ও উপকূলীয় অঞ্চলে ৫ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বর্তমানে মৎস্য উৎপাদনে গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬.২৩ শতাংশ। প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ লোক মৎস্য খাত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে।রুপকল্প ২০২১ অর্জনে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৫.৪৮ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য ও চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। দুই বছরে প্রায় ১৬৫ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদিত হয়েছে এবং ১.৬১ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্য জাত পণ্য রপ্তানি করে ৯.৫ হাজার কোটি টাকার বৈদশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ blue growth economy তে বাংলাদেশকে pilot country হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ৬৯.৭০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে ৫৮.৬ লক্ষ মেট্রিক টন ১ হাজার ৯৯ কোটি ৫২ লক্ষে উন্নীত হয়েছে।
ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরনকল্পে বার্ষিক ৫ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন শাহজালাল সার কারখানা নির্মান প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। বিসিক ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দেশ ব্যাপী ক্ষুদ্রশিল্পে ৩৮৯০ ও কুটিরশিল্প খাতে ৮৯৩৪ জন সম্ভাবনাময় শিল্পোদ্যোক্তা চিহ্নিত করে তাদেরকে শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ–সেবা- সহায়তা প্রদান করে আসছে । বিএসটিআই এর ফুড, মাইক্রোবায়োলজি, সিমেন্ট ও টেক্সটাইল ল্যাবরেটরি ভারতের National Accreditiation Board for Testing Laboratories (NABL) থেকে এক্রিডিটেশন লাভ করেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানীঃ
বিদ্যুৎখাতে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈর্ষনীয় সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত তিন বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (গ্রীডকানেকটেড) ১০২৮৯ মেগাওয়াট থেকে ১৫৩৫১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৬৬৭৫ মেগাওয়াট। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়ায় ৯০৩৬ মেগাওয়াট। ২০১৩ সালের মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩২১ কিলোওয়াট/আওয়ার হতে বর্তমানে ৪০৭ কিলোওয়াট/আওয়ারে উন্নীত হয়েছে। দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২৭০০+ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে এবং সাথে সাথে বিকল্প উৎস হিসেবে আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) চিহ্নিত করা হয়েছে। Floating Storage Re-gasification Unit (FSRU) স্থাপনের জন্য Excelerate Energy (EE) Singapore এর কারিগরি সহায়তায় দৈনিক ৫০০ এমেমসিএফডি (MMCFD) ক্ষমতাসম্পন্ন LNG TERMINAL স্থাপনের কাজ শেষ হলে ২০১৭ এ জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত বিদ্যুৎযুক্তকরাসম্ভবহবে।
সড়ক-সেতু, রেল, নৌ ও স্থানীয় যোগাযোগ অবকাঠামোঃ
পদ্মা সেতুর মূল সেতু এখন প্রায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দুটি সার্ভিস এরিয়া, কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। মোট ৪১ টি স্পানের মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যে প্রকল্প অঞ্চলে এসে পৌঁছেছে। মাওয়া পয়েন্টের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ, আর জাজিরা পয়েন্টের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মানের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চট্রগ্রামের কর্নফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মানে চীন সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ঢাকা- চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক উদ্বোধন হয়েছে গত জুলাই মাসে। একই সাথে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়কও সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পার্বত্য চট্রগ্রামে ২২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬টি মহাসড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ থানচি- আলিকদম মহাসড়কটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সিলেটে সুরমা নদীর উপর কাজীর বাজার সেতু, মাদারীপুরে সপ্তমবাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, শেখ রাসেল সেতু, সুনামগঞ্জে সুরমা সেতু, বিরুলিয়া ও আশুলিয়া সড়কে বিরুলিয়া সেতু, আড়িয়াল খা সেতু, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র সেতু,কলাতলী সেতুসহ বেশকিছু সেতুর নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর যানযট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূদরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগ। এই ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস র্যা পিড ট্রানজিট (BRT) নির্মানের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ২ লক্ষ ২১ হাজার ২৩৮ সেট ডিজিটাল নম্বরপ্লেট বিভিন্ন গাড়িতে সংযোজন করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৪২৫টি ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরন করা হয়েছে। সড়ক। সেতু মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতের আওতায় সার্ফেসিং ব্যতীত ১২৫ কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন,২৭১ কিলোমিটার কার্পেটিংসহ সীলকোট, ১ হাজার ৪৭৪ কিলোমিটার ওভারলে, ২৫৩ কিলোমিটার ডিবিএসটি,২১টি সেতু নির্মান/পুনঃনির্মান,১০৭টি কালভার্ট নির্মান/পুনঃনির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৫ সালে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-সিলেট-শিলং-গৌহাটি-ঢাকা রুটে বাস সার্ভিস চালু হয়। মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটে এসি বাসে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। বিআরটিসির আওতায় ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে গাবতলী ও মোহাম্মদপুরে ০২টি নতুন বাস ডিপো চালু হয়েছে।
২০১৬ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে সংগ্রহ করা কোচ দিয়ে একতা, দ্রুতযান ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়েছে। এ তিনটি ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, ঢাকা-দিনাজপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করছে। এ ছাড়া লাল সবুজ রঙ্গের কোচ দিয়ে ৫টি ট্রেন চালু করা হয়েছে। এ নিয়ে নতুন ট্রেনের সংখ্যায় দাঁড়ালো সাতে।
দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়নে রেল যোগাযোগের বড় প্রকল্প পায়রা রেল লাইন হাতে নেওয়া হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। রেলপথের উন্নয়নে ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়নসহ লাকসাম-চিনকি আস্তানা ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মান প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মান প্রকল্পের ভৌত কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া ১০০টি মিটার গেজ ও ১৭০টি ব্রড গেজ যাত্রীবাহী গাড়ী সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে পায়রা বন্দর, এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এই সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জাহাজ ভেড়ার অবকাঠামো নির্মিত হয়ে যাওয়ায় আগেই ভিড়তে শুরু করেছে জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারছে। এই সক্ষমতা বাড়াতে ‘বে-টার্মিনাল’ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমুদ্র বন্দরের মতো বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে পারদর্শী ও অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের মধ্যে এবং চাঁদপুরের মতলব ও নারায়নগঞ্জের মধ্যে দুটি নতুন রুটে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলঅধিদপ্তরের (LGED)বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার ( উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম) সড়ক, ৪৩ হাজার ২৫০ মিটার ব্রীজ/কালভার্ট নির্মান করা হয়েছে। রাজধানীর যানজট সমস্যা নিরসনে LGED বর্তমানে ৭৭৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভার প্রকল্পের অধীন ৮.২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চারলেন বিশিষ্ট একটি ফ্লাইওভার নির্মানের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগঃ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গত দু বছরে ৬৬৮.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ কর্মসূচির আওতায় ২৪৩৯ জন ছাত্রছাত্রী/গবেষককে অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ২৪০০ মেগাওয়াটবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন লক্ষ্যে রাশিয়ান ফেডারেশন নির্ধারিত ঠিকাদারের সাথে ৩টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জেলা/উপজেলা পর্যায়ে ১৮,১৩০ টি সরকারি অফিসে কানেক্টিভিটি স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ,ভারত,নেপাল ও ভূটান আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে এবং বাংলাবান্ধা পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির লক্ষণীয় প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে আমূল পরিবর্তন আনার কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতার স্বীকৃতি হিসেবে এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অরগনাইজেশন প্রবর্তিত ‘এসোসিও ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৬’ পেয়েছে বাংলাদেশ। আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৬ পুরস্কারে ভুষিত হন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা অক্টোবর ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ১২.০৭ কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬.৬৯ কোটিতে পৌছেছে। টেলিডেনসিটি প্রায় ৮৩.০৯ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি প্রায় ৩৪.৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। টেলিডেনসিটি ও ইন্টারনেট ডেনসিটি যথাক্রমে ১০০ শতাংশ ও ৬৫ শতাংশে উন্নীত করতে জুলাই ২০১৬তে নীতিমালা গ্রহণ করেছে। ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে সারাদেশে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনসহ সিম/রিম রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। সরকারের অন্যতম বৃহৎ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। ডাক অধিদপ্তর মোবাইল মানি অর্ডার সার্ভিস ও ক্যাশকার্ড চালু করেছে। এ পর্যন্ত ৩৫০০ ডাকঘরে পোস্ট ই-সেন্টার চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড ঢাকা শহরের ১ লক্ষ পুরাতন ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপনসহ ১ লক্ষ ৩৯ হাজার নতুন টেলিফোন সংযোগ নতুন টেলিফোন প্রদান করেছে। ৯৫০টি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে প্রায় ৭,১৫৪ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে এবং ৩০০টি ইউনিয়নকে অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।
২০১৭ সালের মধ্যেই দেশে ৪-জি প্রযুক্তি চালু করা হবে। এর পাশাপাশি ভয়েসমেইল সেবাও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সমাজকল্যান ও সামাজিক নিরাপত্তা, ভূমিহীনে ভূমিদান এবং মহিলা ও শিশু উন্নয়নঃ
দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় ৫১ লাখ ২০ হাজার প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা ও শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাঝে সরকার বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করছে। পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ২৪,১৫,০০০ জন। দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পল্লীমাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৩১৮টি কর্মসূচির আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ৮৩৪৯৬০। ২০১৬ সালে বয়স্ক ভাতার হার ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। উপকার ভোগীর সংখ্যা এখন ৩১.৫ লক্ষ। বিধবা ভাতার হারও ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে, উপকার পাচ্ছেন ১১.৫ লক্ষ দুস্থ ও বিধবা নারী। ৭০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির ২০১৬-১৭ সালের বাজেট নির্ধারিত হয়েছে ৪৭.৮৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৫ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে শনাক্ত করা হয়েছে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ১০০টি শাখা উদ্বোধন করা হয়েছে।
অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৭.৫০ লক্ষ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তাদের জন্য ভাতা বরাদ্দ হয়েছে ৬০০ টাকা হারে ৫৪০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আটটি উদ্যেগের একটি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে ২৩৮টি প্রকল্পের অধীনে সুফলভোগীর সংখ্যা ২২,০৪০টি পরিবার। এই প্রকল্পের অধীনে ১ লক্ষ ২২ হাজার পরিবারের মধ্যে ৯৭ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ঃ
দেশের জনগনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আটটি উদ্ভাবনী উদ্যোগের অন্যতম ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লি উন্নয়নের অংশ হিসেবে ‘চরজীবিকায়ন কর্মসূচি-২’ ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি’, ‘পল্লি জনপদ (উন্নত আবাসন) সৃজন’, ‘ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অফ দি পুওরেস্ট (EEP)’, ‘মিল্কভিটার কার্যক্রম সম্প্রসারন’, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্যবিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী’ প্রতিষ্ঠাকরন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক খামারের সংখ্যা ১৮.৭২ লক্ষ। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদানে সুবিধাভোগীরা অনলাইনের মাধ্যমে ২৫৭৩ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার ৪৮৫টি উপজেলায় এ অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিআরডিবির আওতায় এ পর্যন্ত ১,৯৯,৬৮৮টি সমিতি ও দল গঠন করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ কার্যক্রমের আওতায় সদস্যদের মাঝে ১৮,৪৬০টি গভীর নলকূপ, ৪৪,৫২৩টি অগভীর নলকূপ, ১৯,৪০৫টি শক্তিচালিত পাম্প এবং ২,৭৩,০০০টি হস্তচালিত পাম্প বিতরন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (BARD) ৮৮টি প্রশিক্ষন, অবহিতকরন এবং কর্মশালা সংগঠনের মাধ্যমে ৩,৬৫১ জন অংশগ্রহনকারীকে প্রশিক্ষন প্রদান করেছে। চর জীবিকায়ন কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রাম,জামালপুর, গাইবান্ধা,বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার ২৮টি উপজেলার ২.৫০লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণঃ
২০১৬ সালে রেকর্ড ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ উদ্যোগে অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধকল্পে বিদ্যমান টাস্কফোর্স কে আরও বেগবান করার ফলে বিগত বছরে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশির অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।সিঙ্গাপুরের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশানসেক্টরে নিরাপদ ও দক্ষ কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো Sending Organization হিসেবে ১৪টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।জাপানেTechnical Intern প্রেরণের বিষয়ে International Manpower Development Organization, Japan এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে MoUস্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সাথে এ সম্পর্কিত আর ৪টি টেকনিক্যাল এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে।“বিভিন্ন জেলায় ৩০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন (২য় সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৪টি জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ৯ হাজার ৫শ ১৩ জন বিদেশগামী কর্মীকে ‘অভিবাসন ঋণ’ প্রদান করেছে। তা ছাড়া বিদেশ ফেরত প্রায় ১৫০ জন কর্মীকে পুনর্বাসন ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
আইনঃ
ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পে ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা, বিচার ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনিক ও বিচার সংক্রান্ত কার্যক্রম অটোমেশন, ই-কোর্ট রুম স্থাপন এবং বিচারক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইসিটি সক্ষমতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন হবে।
এই প্রকল্পের কর্মপরিধিতে রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচারের আওতায় বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যারের উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থাধীন সব অফিস সংযুক্ত করে একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) তৈরি, সুপ্রিম কোর্টে ডাটা-সেন্টার আপগ্রেডেশন, নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন, দেশের ৬৪ জেলার ১ হাজার ৪০০টি কোর্ট রুমকে ই-কোর্টরুমে রূপান্তর, নিরবচ্ছিন্ন বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা ছাড়া ৬৩ জেলায় ৬৩টি মাইক্রো ডাটা-সেন্টার স্থাপন এবং সুপ্রিম কোর্টের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ স্থাপন। এছাড়া বিচারকদের ২০০০ ট্যাব বা ল্যাপটপ প্রদান, সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ডরুম অটোমেশন এবং পুরনো রেকর্ডগুলো ডিজিটাইজ করা (পাইলট আকারে), আগের বিভিন্ন মামলার রেকর্ড এবং এ সংক্রান্ত রায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ এবং ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিং ব্যবস্থা উন্নয়নও এই কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে।
পররাষ্ট্রঃ
২০১৬ সাল বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। এই বছর চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে আসেন। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ২৬টি চুক্তি সম্পাদন হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ এ বছর গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (GFMD) এর নবম সম্মেলন আয়োজন করে। ১৩০ টি দেশের ৬০০ জন সরকারী কর্মকর্তা ও ৩০টি বেসরকারী সংস্থার ৬০ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলন, গ্লোবাল উইম্যান লিডারস ফোরাম, জি৭ আউটরিচ সম্মেলন, আসেম সম্মেলন, বুদাপেস্ট ওয়াটার সামিট, ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিট, গ্লোবাল ফান্ড রিপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্স এ অংশগ্রহন করেন।
বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে পরাক্রমশালী নারীদের তালিকায় ৩৬তম স্থান অধিকার করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফরচুন ম্যাগাজিনের ‘ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট লিডার’ এর তালিকায় ১০ম স্থান অধিকার করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফরেন পলিসি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ চিন্তাবিদদের একজন হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং জলাবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলা ও বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকা রাখায় তাঁকে ‘ডিসিশানমেকার্স’ ক্যাটাগরিতে শীর্ষ ১৩ জন চিন্তাবিদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণWomen in Parliament(WIP) Global Forum Award 2015 পুরষ্কারেভূষিত হয়। ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ (Tree of Peace)পুরস্কার লাভ করেন। জাতিসংঘেরMillennium Development Goals (MDGs) অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৪ সালে Commonwealth Parliamentary Association (CPA) এর নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন, Inter-Parliamentary Union (IPU) এর প্রেসিডেন্ট, Comittee on the Elimination of Discrimination Against Woman (CEDAW) এর সদস্য, International Mobile Satellite Organizatio(IMSO) এর মহাপরিচালক পদে বাংলাদেশের প্রার্থীরা নির্ভাবিত হন। একই বছর বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল, UNICEF Executive Board, International Labour Organization (ILO) এর গভর্নিং বডি এবং ITU Council এর সদস্য নির্বাচিত হয়। ২০১৫ এ UNESCO বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে UNESCO Category II স্ট্যাতাস প্রদান করে এবং জাতিসংঘ সাধার পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০১৪ সালে ঢাকায় BIMSTEC এর স্থায়ী সচিবালয় স্থাপিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুদেশের মধ্যে ২২টি উল্লেখযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পরিবেশ ও বনঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত Champions of The Earth পুরষ্কারে ভূষিত হন। সুন্দরবন এনভায়রনমেন্টাল এন্ড লাইভলিহুড সিকিউরিটি (SELS) প্রজেক্টের মাধ্যমে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয়বর্ধক কর্মসংস্থান সৃষ্টিকরার ফলে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে। পরিবেশ দূষণকারী ৪০২টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৩৪ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা সহ দেশের উপকূলীয় জেলাসমূহে প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর এলাকায় বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। ৫ লক্ষ পরিবারকে সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা হয়েছে। ৭২ শতাংশ শিল্প কারখানায় ইটিপি স্থাপন সহ ৮ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন এবং ১৫ লক্ষ উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
তথ্যঃ
অধিকতর সেবা এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের জন্য ১৬ তলা বিশিষ্ট তথ্য ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমান জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকারী ভবনসমূহ নির্মাণ কার্যক্রম তরান্বিত হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য বিটিভি সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তথ্য কমিশন দুবছরে ৮৮৭৮ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ সাংবাদিক, সাব এডিটর, সাব ইন্সপেক্টর ও শিক্ষককে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এবং ৫৮৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫৫৭টি নিষ্পত্তি ক্রএছে। অবশিষ্ট ৩০টি অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়াধীন্ন রয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (RAJUK) আবাসন সমস্যার সমাধানে উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (৩য় পর্ব), পূর্বাচল নতুন শহর ও ঝিলমিল আবাসিক শহরে মধ্যবিত্তের জন্য প্রায় ৯০ হাজার এপার্টমেন্ট নির্মাণ করছে। এ ছাড়া জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যার নিরসন এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে বিক্রয়ের জন্য ৮৮৮১টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। রাজধানীর কুড়াইল এলাকায় অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রায় ৫০০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে পূর্বাচলে দেশের সর্বোচ্চ ১৩০ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রঃ
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমানা সংক্রান্ত Land Boundary Agreement 1974 (মুজিব ইন্দিরা চুক্তি) অনুসমর্থন দলিল বিনময়ের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে। ১ আগষ্ট ২০১৫ কে Appointed day হিসেবে নির্ধারণপূর্বক উভয় দেশের মধ্যে ভূমি বিনিময় সম্পন্ন হয়। ফলে অপদখলীয় ভূমিসহ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডে অবস্থিত সকল ভারতীয় ছিটমহল বাংলাদেশের এবং ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত সকল বাংলাদেশী ছিটমহল ভারতের ভূখন্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও কঠোর পরিশ্রমে দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসন হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর আধুনিকায়ন ও সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ৫২৭টি বর্ডার অপারেশন পোষ্ট (বিওপি) এর অতিরিক্ত ৮০টি বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিকদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এবং প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা (MRV) প্রদান করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনঃ
১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প এর প্রথম পর্যায়ের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বর্তমান প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীতকরণ, প্রস্থ ১৫০ থেকে ২০০ ফুটে উন্নীতকরণ, এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন, ফায়ার ফাইটিং ভেহিকল ক্রয় এবং নাব্য যোগাযোগ যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক বেশ কিছু কাজ চলছে।
৪ হাজার ৩শ ২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে চট্টগ্রামস্থ চট্রগ্রাম মোটেল সৈকতের জমিতে নতুন পর্যটন মোটেল নির্মাণ এবং কক্সবাজারস্থ হোটেল শৈবালের সংস্কার সমাপ্ত হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল ১ ও ২, অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল, ভি ভি আইপি কমপ্লেক্স, কন্ট্রোল টাওয়ার ভবন ও পাওয়ার হাউজ ফায়ার ডিটেকশন ও এলার্ম সিস্টেম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশ বিমান সর্বমোট ২৭৬ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মুনাফার পরিমান ছিল ২৩৩.০৬ কোটি টাকা।
বস্ত্র ও পাটঃ
বস্ত্র ও পাট খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে তা নিরসনের জন্য পাট আইন ২০১৫, বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান আইন ২০১৫ ও বস্ত্রনীতি ২০১৫ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এর আওতায় ধান,চাল,গম,ভুট্টা, সার ও চিনি মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূল্ক করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষাঃ
২০১৬ সালে নৌ প্রতিরক্ষায় যুক্ত হয়েছে সাবমেরিন। বানৌজা ‘নবযাত্রা’ ও বানৌজা ‘জয়যাত্রা’ নামের দুটি সাবমেরিন চীনের কাছ থেকে ক্রয় করেছে সরকার। সমুদ্রসীমা টহল দিতে ২০১৬ সালে একটি ফ্রিগেট ও একটি করভেট কমিশনপ্রাপ্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা চেতনায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিএমএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, ভাটিয়ারী, চট্টগ্রাম শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ত হয়েছে। বিমান বাহিনী্ ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে বিএএফএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ যশোর শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। Upgradation of Agro-Metrological Services শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৭টি কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। Improvement of Digital Mapping, System of Survey of Bangladesh (Revised) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও মৌলভীবাজারে ৬টি Permanent GNSS/GPS Station, Digital Mapping Unit (DMU) স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সমগ্র দেশের Aerial Photography সম্পন্নকরণ সহ আন্তর্জাতিক সীমান্ত উপকূল ও সুন্দরবন এলাকার জন্য Sattelite Image ক্রয় করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কঃ
আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিয়েছে এক অনন্য উদ্যোগ। যুদ্ধাহত ও ভুমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নির্মান করা হয়েছে বীর নিবাস। ইতোমধ্যে সিলেটে ৬২টি বীর নিবাস হস্তান্তর করা হয়েছে।
সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা বর্তমানে ১০০০০ টাকা এবং ভাতাভোগীদের সংখ্যা ২ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে। জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ৩০০০০ টাকা এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ১৫০০০ টাকা, বীর উত্তমদের জন্য ২৫০০০ টাকা, বীর বিক্রমদের জন্য ২০০০০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা চালু করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে পঙ্গুত্বের হার অনুযায়ী মাসিক সর্বনিম্ন ১৮০০০ টাকা এবং মাসিক সর্বোচ্চ ৪৮০০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়মিত ভাতা প্রদান একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পটিতে ২৯৭১টি বাসস্থান নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪৩টি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সকল উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ৮১টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৫৯টি স্মৃতিস্তভের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
ধর্মঃ
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় দুই বছরে ১,৫০০০০টি শিশুকে প্রাক প্রাথমিক ও নৈতিকতা শিক্ষা, ১০,২৯০০০ জন কিশোর কিশোরীকে সহজ কুরআন ও নৈতিকতা শিক্ষা এবং ৩৮,৪০০ জন নিরক্ষর বয়স্ক ব্যক্তিকে অক্ষরজ্ঞানদানসহ নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং দুঃস্থ পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মোট ৪২,৯৮,৮৬০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে হজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেমে সকল হজযাত্রীর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে এসএমএস এর মাধ্যমে হজ পূর্ব ৬টি নোটিফিকেশন প্রেরণ এবং মোবাইলের TVR সিস্টেমের মাধ্যমে হজ বুলেটিন ও তথ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
সংস্কৃতিঃ
জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৫ জন সুধীকে একুশে পদক ২০১৫ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৪ এ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক এবং ২০১৫ এ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৫-১৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি পাঠাগার অনুদান খাতে ১ হাজার ২৫টি পাঠাগারে ২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এছাড়া চারুশিল্প, থিয়েটার ইত্যাদি খাত থেকে ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা দেশের ১,১৭৪টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অনুদান প্রদান করা হয়।
পানি সম্পদঃ
গত ৩ বছরে ১৯২.৪২ কিলোমিটার নদী খনন/ড্রেজিং সমাপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাপিটাল (পাইলট) ড্রেজিং অফ রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় যমুনা নদীতে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় পরীক্ষামূলক ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাপ্ত ড্রেজড ম্যাটেরিয়ালস দ্বারা সিরাজগঞ্জ শহর সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অংশে চারটি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়। এতে প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার ভূমি স্থায়ীভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়। উপকূলীয় এলাকায় নতুন জেগে উঠা চরে সমাপ্তকৃত চর ডেভেলপমেন্ট ও সেটেলমেন্ট প্রকল্পসমূহের আওতায় ১৭,৫৩৩ ভূমিহীন পরিবারকে ১৪,৭৯২ হেক্টর জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়াঃ
এইবছর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করেছে। বাংলাদেশের মেয়েরা এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত নারী ফুটবল চাপিম্পয়নশীপ প্রতিযোগিতায় আমাদের মেয়েরা এই প্রথমবারের মত রানার্স-আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। জাতীয় নারী ক্রিকেট দল জায়গা করে নিয়েছে আগামী বছরের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক দুই মেয়াদে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি পাবে- এলক্ষ্যে মহাজোট সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।